করোনা ভাইরাসে মৃত মুসলিম কমিউনিটির লাশ দাফনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত পরিসরে এই গাইডলাইনটি তৈরী করেছেন সাংবাদিক মিজান রহমান। ইনফেকশন কন্ট্রোল ও প্রিভেনশন এর আলোকে বিভিন্ন নীতিমালার অনুসরনে এ গাইডলাইনটি তৈরী করা হয়েছে। উল্লেখ্য, মিজান রহমান রয়েল এনভায়রনমেন্টাল হেলথ ইন্সটিটিউট অব স্কটল্যন্ড (রেহিস) অনুমোদিত পারসোনাল হাইজিন ও ফুড সেফটি কনসালটেন্ট। সম্প্রতি করোনাভাইরাস সম্পৃক্ত মৃত ব্যাক্তির লাশ গোছল ও দাফনে লেখকের ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা এ গাইড লাইনে যুক্ত হয়েছে।
লিখেছেন: মিজান রহমান, ১২ এপ্রিল ২০২০, এডিনবরা
বর্তমান সময়ে করোনাভাইরাসে মৃত মুসলমানদের লাশ দাফন নিয়ে ব্রিটেন জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে অচলাবস্থা। গুজব এবং ভুয়া তথ্যে মানুষ এখন দিশেহারা। প্রিয় জনকে হারিয়ে আত্বীয় স্বজনরা যখন শোকে কাতর তখন মৃতদেহ সৎকার নিয়ে দেখা দিচ্ছে নানান সমস্যা। বাঙালী অধ্যুষিত লন্ডনে করোনাভাইরাসে মৃতের হার সবচে বেশী। ইস্ট লন্ডনে রয়েছে দুইটি মুসলিম ফিউন্যারেল সার্ভিস। মৃতের আত্বীয়রা জানান, করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে জানলে এসব ফিউন্যারেল সার্ভিস কোন লাশ দাফনের জন্য গ্রহন করছে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। লন্ডনে একমাত্র ইডেন কেয়ার নামক একটি সংস্থা করোনায় মৃতদের লাশ সৎকারের দায়িত্ব নিচ্ছে। অধিক সংখ্যক লাশ হওয়ায় ইডেন কেয়ারে দাফনের জন্য দীর্ঘসময় অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে সবাইকে। কিন্তুু প্রশ্ন হচ্ছে বাঙালী মালিকানাধিন ফিউন্যারেল সার্ভিসগুলো কোন কারনে করোনায় মৃত লাশ দাফনে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে ?
সরকারের ইনফেকশন কন্ট্রোল বিষয়ক প্রটোকলে করোনাভাইরাসে মৃত দেহ কে হ্যাজার্ড ক্যাটাগরি ৩ এ রাখা হয়েছে। এ ক্যাটাগরি ভুক্ত মৃতদেহ ধর্মীয় বা দাফনের উদ্দেশ্যে পরিষ্কার বা গোছল করানো যাবে। (লিংক)
নীতিমালা অনুযায়ী তারা যদি সঠিক জনবল, প্রশিক্ষন ও পদক্ষেপ নেন তাহলে করোনায় মৃতদের লাশের গোছল ও দাফনে কোন সমস্যা থাকার কথা নয়। সরকারের নীতিমালা অনুসরন করলে অবশ্যই বাড়তি কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। বাঙালী কোম্পানীগুলো এত ঝুট ঝামেলায় যেতে চাচ্ছে না, তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কোন উদ্যোগ নিতে ও অনীহা দেখাচ্ছে। কমিউনিটির এ বিপদের মুহুর্তে তারা ফিউন্যারেল সেবা দেয়া থেকে নিজেদের বিরত রাখছে। এই মুহুর্তে এসব কোম্পানীর উচিত অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শক্রমে সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী সবধরনের উপকরন ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করা। স্টাফদের দ্রুত প্রশিক্ষন দিয়ে বিশেষায়িত ফিউন্যারেল সার্ভিস অব্যহত রাখা। যেসব ব্যাপারে প্রশিক্ষন সহায়ক সেগুলি হচ্ছে ইনফেকশন কন্ট্রোল ও প্রিভেনশন ট্রেনিং, পিপিই ট্রেনিং ইত্যাদি।
ওদিকে স্কটল্যান্ডে করোনায় মৃতদের লাশ গোছল ও দাফনের কাজটি সুষ্টভাবে করে যাচ্ছে স্থানীয় একটি ফিউনারেল সংস্থা। এডিনবরা ভিত্তিক মুসলিম ফিউন্যারেল সার্ভিস ইতিমধ্যে করোনায় মৃত কয়েকটি লাশের গোছল সহ যাবতীয় কার্যক্রম ভালভাবেই সম্পাদন করেছে। উক্ত কোম্পানীর মালিকের আন্তরিকতার ফলে এমনটা সম্ভব হয়েছে।
এই গাইডলাইনে করোনায় মৃত লাশ গোছল ও দাফনের ক্ষেত্রে সরকার প্রদত্ত নীতিমালা বিস্তারিত ভাবে বর্নিত হয়েছে। এই গাইডটি ভালভাবে পড়লে লাশ গোছল ও দাফনে যারা স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে যুক্ত হতে চান তারা একটি সুস্ট ধারনা পাবেন বলে আমার বিশ্বাস ।
করোনায় মৃত একটি লাশ ধোয়ানোর সাথে আমি নিজে ও যুক্ত ছিলাম। ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং বিজ্ঞানসম্মত তত্বীয় জ্ঞানের আলোকে এই গাইডলাইনটি লেখা হয়েছে।
করোনায় মৃতদের গোছল ও জানাযায় প্রযোজ্য নীতিমালা গুলি কি কি ?
ইউকে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা, ইউকে ভিত্তিক বিভিন্ন মুসলিম চিন্তাবিদ ও শীর্ষস্থানীয় সংস্থা এবং ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গেনাইজেশন কতৃক প্রকাশিত নির্দেশিকা সহ নিচের ৫ টি নীতিমালার আলোকে এই গাইডলাইনটি প্রস্তুত কর হয়েছে-
১. করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ইউকে সরকারের সামাজিক দুরত্ব বিষয়ক নীতিমালা যা কিনা জানাযার নামাজ অনুষ্টিত হওয়ার সময় প্রযোজ্য হবে
২. এছাড়া মৃতদেহে সংক্রামক রোগের জীবানু থাকায় সরকারের ২ ধরনের নীতিমালা এখানে প্রযোজ্য হবে যেমন- ইনফেকশন কন্ট্রোল প্রিকশন (এসআইসিপি) ও ট্রান্সমিশন বেইসড প্রিকশন (টিবিপি)
৩. করোনা ভাইরাস পেনডেমিক চলাকালে যে সব কমিউনিটি সংস্থা সংক্রমিত ব্যাক্তিদের নানা সেবা প্রদান করবে তাদের জন্য বৃটিশ সরকার যে নীতিমালা প্রকাশ করেছে তা ও এখানে প্রযোজ্য হবে।
৪. করোনায় মৃতদের সৎকার সংক্রান্ত ওয়ার্ল্ড হেলথ ওর্গেনাইজেন কতৃক প্রকাশিত গাইডলাইনের বাস্তবায়ন
৫. ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে মৃতদেহ সৎকার ও গোছল করানো প্রসঙ্গে ব্রিটেনের শীর্ষ পর্যায়ের আলেম ওলামা এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন গাইডলাইন প্রকাশ করেছেন।
কাদের জন্য এই গাইডলাইনটি প্রযোজ্য হবে ?
মুলত যুক্তরাজ্যের (স্কটল্যান্ড, ইংল্যান্ড, ওয়েলস ও আয়ারল্যান্ড) সবগুলো শহরে বসবাসরত মুসলিম কমিউনিটির জন্য এই নির্দেশিকাটি প্রযোজ্য হবে। তবে স্থানীয় ভাবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কিছুটা পার্থক্য থাকতে পারে। কাউন্সিল বা স্থানীয় সরকার অঞ্চল ভিত্তিক ফিউনারেলের ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারে। তাই স্থাণীয় কাউন্সিলের ফিউন্যারেল বিভাগ এবং ফিউন্যারেল ডাইরেক্টরের পরামর্শ গ্রহন করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।
যেহেতু এই গাইডলাইনে ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্জেনাইজেশন এর নীতিমালা প্রতিফলিত হয়েছে তাই বিশ্বের যেকোন দেশে অবস্থানরত মুসলিম কমিউনিটি এটা অনুসরন করতে পারবেন। জীবানুর বিস্তার ও নিয়ন্ত্রন প্রতিরোধ করার পদ্ধতি নিয়ে কারো কোন দ্বিমত নেই। ইউকে সরকারের যে দুইটি নীতিমালা (এসআইসিপি ও টিবিপি) এখানে অনুসরন করা হয়েছে তা বিশ্বব্যাপী গ্রহনযোগ্য। বিশ্বের সকল দেশেই ভাইরাস একই রকম আচরন করছে তাই যে কেউ এই গাইডলাইনে দেয়া পদ্ধতি অনুসরন করতে পারেন। এর মুলকথা হচ্ছে, জীবানুর সংক্রমন থেকে কিভাবে স্বেচ্ছাসেবীরা নিরাপদে থাকবেন সেটা নিশ্চিত করা।
প্রাক প্রস্তুুতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহন
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মৃত ব্যাক্তির লাশ গোছল ও দাফন করানোর পুর্বে প্রথমেই আপনাকে একটি সুষ্ট পরিকল্পনা গ্রহন করতে হবে। সবধরনের ঝুকি সমুহ পর্যবেক্ষন করে গোছলের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ ও উপাদানসমুহ আগেই যোগাড় করতে হবে। যদি দেখা যায় লাশ ধোয়ানোর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ কিংবা প্রয়োজনীয় উপাদান যোগাড় করা সম্ভবপর নয় তাহলে লাশ ধোয়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে এবং বডি ব্যাগ থেকে লাশটি কখনই বের করা যাবে না। এক্ষেত্রে স্থানীয় আলেম ওলামার পরামর্শক্রমে লাশ তায়াম্মুমের ব্যাবস্থা করা যেতে পারে। উপযুক্ত পরিবেশ ও উপাদান ছাড়া গোছল করানো সবার জন্য মারাত্বক ঝুকিপুর্ন। এ ধরনের ঝুকি নেয়া সম্পুর্নরুপে বেআইনি।
গোছল / দাফনের পুর্বশর্ত গুলি কিকি ?
১. গোছলের জন্য উপযুক্ত স্থান ও ব্যাবস্থা
২. প্রশিক্ষন প্রাপ্ত এবং উপযুক্ত লোক
৩. প্রয়োজনীয় ব্যাক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম ও অন্যান্য উপাদান
যদি উপরোক্ত তিনটি শর্ত অনুযায়ী সবগুলো উপাদান না থাকে তাহলে লাশ গোছল করানো থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। এ ব্যাপার গুলি নিশ্চিত করার দায়িত্ব মুলত: ফিউনারেল সার্ভিসের । যারা মসজিদে ফিউন্যারেল সার্ভিস পরিচালনা করেন তারা ও এ ব্যাপারে উদ্যোগী হতে পারেন।
গোছলের স্থান (ওয়াশ রুম) কেমন হতে হবে ?
যে জায়গায় বা ওয়াস রুমে গোসল করানো হবে তার কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে। উন্নত বিশে^র অধিকাংশ দেশে পারপাস বিল্ড ওয়াশ রুম নির্মান করা হয়। এতে সবধরনের নিরাপত্তামুলক বৈশিষ্ট্যগুলি মুল ডিজাইনের সাথে সংযুক্ত থাকে। তবে ইউকের আইন অনুযায়ী বর্তমানে গোসলের রুমে যে সমস্ত উপাদান থাকতে হবে সেগুলি হচ্ছে,
- রুমের অভ্যন্তরে অবশ্যই বাতাস চলাচলের ব্যাবস্থা অর্থাৎ এক্সজষ্ট ফ্যান থাকতে হবে ।
- দেয়াল ও ছাদে ওয়াটার প্রুফ উপাদান (বড় সাইজের টাইলস বা স্টিল) থাকতে হবে। ওয়াটার প্রুফ মেঝে থাকতে হবে ।
- গরম পানির সরবরাহ থাকতে হবে ।
যে টেবিলে লাশ ধোয়ানো হবে সেটি হতে হবে বিশেষ ভাবে ডিজাইন কৃত। যেমন টেবিলটির উপরে চারপাশে পানি চুইয়ে পড়া প্রতিরোধে একধরনের ওয়াল থাকবে। টেবিলের উপর থেকে পানি যাতে একটি নির্ধারিত জায়গা দিয়ে নিষ্কাশিত হতে পারে অনেকটা বাথ টাবের মত। কোভিড-১৯ সংক্রমন প্রতিরোধে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন বিষয় হচ্ছে দুষিত পানির ফোটা (ড্রপলেট) কোনভাবেই টেবিল থেকে চারপাশে চুইয়ে না পরে।
কোন কারনে এ ধরনের বিশেষায়িত টেবিল পাওয়া না যায় (অন্য দেশের ক্ষেত্রে) তাহলে বিকল্প হিসাবে নিরাপত্তামুলক কিছু ব্যাবস্থা নেয়া যেতে পারে। ধোয়ানোর টেবিলের উপর বড় সাইজের ভারী পলিথিন শীট বিছিয়ে এর চার পাশ মুড়ে দেয়া যেতে পারে। এক কোনায় পানি নিষ্কাষনের ব্যাবস্থা রাখতে হবে। যেদিকে পানি নিষ্কাশিত হবে সেদিকে যেন পানি ছিটিয়ে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সময় পানির ছিটা যেন না ওঠে সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে ।
কারা লাশ ধোয়াতে পারবেন ?
কারা কারা গোছল সম্পাদন করাবেন তা আগেই নির্ধারন করে নিতে হবে। অন্তত ৪ জন স্বেচ্ছাসেবী প্রয়োজন যারা সম্পুর্ন রুপে সুস্থ এবং সবল দেহের অধিকারী। বয়স্ক ও বৃদ্ধ ব্যক্তিদের এতে যুক্ত করা যাবে না ( সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী বয়স ৬০ এর নীচে থাকতে হবে )। জটিল ও কঠিন রোগে ভুগছেন (কিডনী, হার্ট, অ্যাজমা, ডায়বেটিক, ক্যানসার, দুর্বল ইমিউন সিস্টেম, জন্ডিস, হেপাটাইটিস বা শ্বাস কষ্টের কোন রোগ ) এরকম কাউকে গোসল বা দাফনে যুক্ত করা যাবে না। বিস্তারিত তালিকাটি দেখতে চাইলে এই সাইটটি ভিজিট করুন [ bit.ly/2wLvtQZ ] । যদি কেউ করোনাজনিত কারনে আইসোলেশনে থাকেন কিংবা কোয়ারেন্টাইনে থাকলে তাহলে তারা ও গোসল কিংবা দাফনে আসতে পারবেন না। পুর্ব নির্ধারিত ৪ জন ব্যাক্তি ছাড়া গোসলের সময় অন্য কেউ পানি দিতে বা অন্য কোন কারনে লাশের কাছে আসতে পারবেন না।
গোছলের জন্য কি কি সরঞ্জাম প্রস্তত রাখতে হবে ?
- তিন ধরনের পানি
- ডেটল/জীবানুনাশক: ১ লিটার
- কর্পুর: ১৫ -২০ টি কিউব
- আতর: ১ টি
- কটন টাওয়েল: বড় ২ টি ও ছোট ৪ টি
- হ্যান্ড হেল্ড স্প্রেয়ার
- বালতি ও মগ
- পিপিই : কমপক্ষে ৪ সেট
- কেচি
- বিন ব্যাগ: মাঝারী ও বড়
- ফোমের স্পঞ্জ : ৪ টি
- হ্যান্ড জেল
- হ্যান্ড ওয়াশিং লিকুইড
- কাফনের কাপড়
- ফেইস মাস্ক ও ব্যান্ডিজ
- পলিথিন শীট
লাশ ধোয়ানোর জন্য পানি কিভাবে প্রস্তুুত করবেন ?
প্রচলিত পদ্ধতিতে সাবান ব্যাবহার করা হয় কিন্তুু করোনাভাইরাসে মৃত ব্যাক্তিদের লাশ ধোয়াতে সাবান নিরাপদ নয়। এক্ষেত্রে যেসব জীবানু নাশক তরল ব্যাবহার করা যায় সেটি হচ্ছে ডেটল বা স্যাভলন (পিসিএমএক্স জাতীয় ক্যামিকেল)। জীবানুনাশক অন্য যে কোন ব্রান্ডের লিকুইড হতে পারে। ডেটল যেহেতু সব দেশেই পাওয়া যায় এবং সহজলভ্য তাই এখানে উল্লেখ করা হয়েছে। সুগন্ধী হিসাবে কর্পুর কিউব প্রয়োজন হবে। গোছলের কাজ শুরু করার আগে প্রয়োজনীয় লিক্ইুড গুলি পরিমানমত পানির সাথে মিশিয়ে বালতিতে রেখে দিতে হবে। এখানে মোট তিন ধরনের পানি তৈরী করতে হবে।
১. প্রথমত: গোছলের জন্য ঘন জীবানুনাশক লিক্ইুড তৈরী করতে হবে। প্রতি লিটার গরম পানির সাথে ৩০ মি:লি: (তরকারীর চামচ /টেবিলস্পুনে ২ চামচ) ডেটল মিশিয়ে এ লিকুইড তৈরী করা যায়। এ জাতীয় ঘন লিকুইড একটি লাশের জন্য অন্তত ৫ লিটারই যথেষ্ট। পানির তাপমাত্রা কমপক্ষে ৫০-৬০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড থাকলে ভাল।
২. দ্বিতীয়ত: অপেক্ষাকৃত হালকা জীবানুনাশক লিকুইড প্রস্তুত পানি যা দিয়ে মুল গোছল সম্পন্ন করতে হবে। এক্ষেত্রে গরম পানি ব্যাবহার করতে হবে। পানির তাপমাত্রা কমপক্ষে ৮৫ ডিগ্রী হওয়া বাঞ্চনীয়। প্রতি লিটার পানিতে ১০ মি:লি: ডেটল মিশিয়ে গোছলের জন্য প্রয়োজন মত পানি আলাদা করে রেখে দিতে হবে। ১ টি লাশ ধোয়ানোর জন্য প্রায় ২০ -৩০ লিটার এ জাতীয় পানি প্রয়োজন।
৩. তৃতীয়ত: এবার গোছলের চুড়ান্ত ধাপের জন্য সুগন্ধিযুক্ত পানি তৈরী করে রাখতে হবে। কর্পুরের কিউবগুলিকে মিহি করে গরম পানিতে মিশিয়ে সুগন্ধিযুক্ত পানি প্রস্তুত করা যায়। প্রতি লিটার পানিতে একটি করে কিউব দেয়া যেতে পারে। এ ধাপের জন্য কমপক্ষে ১০ লিটার পানি যথেষ্ট ।
বর্জ্য / অবর্জনা কোথায় ও কিভাবে ফেলবেন?
ময়লা, আবর্জনা, মৃত ব্যাক্তির পরিধেয় কাপড় চোপড় ইত্যাদি কোথায়, কিভাবে ফেলা হবে তার ব্যাবস্থা আগে করে রাখতে হবে। পলিথিনের ডাবল ব্যাগ ব্যাবহার করতে হবে। গোছলের পানি কোথায় নিষ্কাশিত হবে তা নিশ্চিত করতে হবে। ড্রেনেজ পাইপে কোথাও লিক আছে কিনা তা খেয়াল রাখতে হবে। ড্রেনেজ সিস্টেম না থাকলে গোছলের পানি খোলা জায়গায় যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে ব্যবস্থা রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে গোছলের স্থানের পাশেই মাটিতে একটি গভীর গর্ত করে স্থানটিকে সুরক্ষিত করে রাখা যায়।
কিভাবে ব্যাক্তিগত সুরক্ষা নিতে হবে ?
যেহেতু করোনা ভাইরাস একটি সংক্রামক জীবানু তাই যারা গোছল করাবেন তাদের সুরক্ষার বিষয়টি সবচে বেশী প্রাধান্য দেয়া প্রয়োজন। যে চার জন ব্যাক্তি লাশ ধোয়াবেন তাদের প্রত্যেকের ব্যাক্তিগত সুরক্ষার লক্ষ্যে বিশেষ কিছু সরঞ্জাম পরতে হবে। যদি এসব সরঞ্জাম না থাকে তাহলে লাশ ধোয়ানো থেকে বিরত থাকবে হবে। কোনক্রমেই ঝুকি নেয়া উচিত হবে না। বর্তমানে সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী সেসব পিপিই (পারসোন্যাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট) পরিধান করা বাধ্যতামুলক সেগুলি হচ্ছে নি¤œরুপ। এসব সরঞ্জাম শুধু একবার ব্যাবহার করে ফেলে দিতে হবে। পরিধানের পুর্বে ঘড়ি, চেইন, ব্রেসলেট, মোবাইল, চাবি সহ যাবতীয় ব্যাক্তিগত সরঞ্জাম খুলে আলাদা স্থানে রেখে দিতে হবে। হাতে বা শরীরের চামড়ার উপরিভাগে কোন কাটা, ক্ষত বা ঘা থাকলে তা প্লাস্টার দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
বাধ্যতামুলক:
-মেডিক্যাল গ্লাভস (ডাবল )
-এপ্রন (প্লাস্টিকের)
-সার্জিকেল মাস্ক (তরল নিরোধক/এফআরএসএম)
-চোখের আবরন/ গগলস বা বড় আকৃতির চশমা
ঐচ্ছিক:
-লম্বা গাউন (হাটুর নীচ পর্যন্ত ও ফুল হাতা)
-জুতার আবরন (পলিথিন)
-ওয়াটার প্রুফ বুট
পিপিই (PPE) ব্যাবহারের জন্য রয়েছে বিশেষ কিছু পদ্ধতি। পরিধান করার (ডনিং) ধারাবাহিক কিছু প্রক্রিয়া আছে এবং খোলার সময় (ডফিং) ও ধারাবাহিক প্রক্রিয়া অনুসরন করতে হবে। নতুবা যে উদ্দেশ্যে এগুলি পরিধান করা হয়েছে তা বাস্তবায়ন হবে না। গøভস খোলার ও রয়েছে বিশেষ প্রক্রিয়া। পিপিই পরিধানের পুর্বে এবং খোলার পর সাবান ও গরম পানি দিয়ে ভালভাবে হাত ধুতে হবে।
পিপিই পরিধানের ধাপ : হাত ধোওয়া >এপ্রন> মাস্ক > চোখের আবরন> গ্লাভস
পিপিই খোলার ধাপ : গ্লাভস > আই কাভার >এপ্রন > মাস্ক > হাত ধোয়া
পিপিই ব্যাবহারের পুর্বে এ সংক্রান্ত ভিডিও টি দেখে নিলে সবার জন্য বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। (পিপিই ট্রেনিং ভিডিওর লিংক)
ইনফেকশন নিয়ন্ত্রনে সবচেয়ে সহায়ক পন্থা হচ্ছে ঘন ঘন হ্যান্ড ওয়াশ করা। সঠিক উপায়ে, গরম পানি ও সাবান দিয়ে অন্তত আধা মিনিট সময় ব্যায় করে কবজী সহ হাত ধোতে হবে।
মুল গোছলের ধারাবাহিক ধাপ সমুহ কি ?
মুল প্রক্রিয়া শুরু করার আগে গোছলের প্রয়োজনীয় উপাদান, বিভিন্ন ধরনের পানি, যন্ত্রপাতি ও কাফনের কাপড় ইত্যাদি আগে থেকেই প্রস্তুত করে রেখে দিতে হবে। ইতিমধ্যে সকল স্বেচ্ছাসেবীরা যথাযথ নিয়ম অনুযায়ী পিপিই পরে নিবেন। প্রথমে হাত ধুতে হবে তারপর পিপিই পরবেন।
১. গোছলের প্রয়োজনীয় উপাদান, বিভিন্ন ধরনের পানি, যন্ত্রপাতি, কাফনের কাপড় ইত্যাদি রেডী আছে কিনা তা পরীক্ষা করা । সকল স্বেচ্ছাসেবীরা যথাযথ নিয়ম অনুযায়ী পিপিই পরে নিয়েছেন কিনা তা পরীক্ষা করা।
২. বডি ব্যাগ সহ টেবিলে লাশ রাখবেন। এ সময় প্রত্যেকে মৃতদেহ থেকে কমপক্ষে দুই ফুট দুরে থাকবেন। বডি ব্যাগ থেকে মাথার অংশ অবমুক্ত করে মৃতদেহের মুখ ও নাক পুরু বেন্ডিজ দিয়ে আবৃত করে দিতে হবে। বেন্ডিজগুলি যাতে সরে না পড়ে তাই এর উপরে একটি সার্জিকেল মাস্ক লাগিয়ে দিন। এটা কখনই খোলা যাবে না। যাবতীয় কাজ এই মাস্কের উপর দিয়ে করতে হবে। অধিকাংশ সময় মরচুয়ারি থেকে এ ধরনের মাস্কিং করে দেয়া থাকে। এই মাস্ক সহ লাশ কবরে যাবে।
৩. এবার ঘন জীবানুনাশক পানি দিয়ে হাতে কবজি ও মুখ ধুতে হবে। এক্ষেত্রে পানি ঢালার সময় খুব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। শরীরের খুব কাছ থেকে আস্তে আস্তে মগ থেকে পানি ঢালতে হবে। কখনই শাওয়ার ব্যাবহার যাবে না। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে হাতে কিংবা মুখে যদি জীবানু থাকে তা ধ্বংস করা।
৪. এবার পুরো বডি ব্যাগ অপসারন করতে হবে এবং লাশের গায়ে যদি কোন পরিধেয় কাপড় চোপড় থাকে তা কেচি দিয়ে কেটে খুলে ফেলতে হবে। তার আগে অবশ্যই হাটু থেকে বুক পর্যন্ত একটি টাওয়েল দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। পরিধেয় কাপড় ও বডি ব্যাগ খুব সাবধানে আলাদা বিন ব্যাগে পুরে মুখ বন্ধ করে ডাস্টবিনে ফেলতে হবে। জীবিত ব্যাক্তির ন্যায় মৃতদেহের প্রাইভেসি ও সম্মান রক্ষা করতে হবে।
৫. এবার মৃতদেহের গোপনাঙ্গ পরিষ্কারের লক্ষ্যে ঘন জীবানুনাশক পানি উপর থেকে ধীরে ধীরে ঢেলে দিতে হবে।
৬. পরবর্তী ধাপ হচ্ছে ওযু করানো। স্বাভাবিক নিয়মেই অযু করাতে হবে তবে এ পর্যায়ে হাত দিয়ে মৃতের দেহ ঘষা মাঝা করা যাবে না। শুধু ঘন জীবানুনাশক পানি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে (হাত, পা ও মাথা) আস্তে আস্তে ঢেলে ওযুর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। মাথা ও মুখ মোছেহ করার পরিবর্তে মাস্কের উপর দিয়ে ঘন জীবানুনাশক পানি ঢেলে কাজগুলো সম্পাদন করতে হবে।
৭. এ পর্যায়ে পুরো শরীর ধৌত করা। এ ক্ষেত্রে হালকা জীবানু নাশক পানি (২নং পানি) ব্যাবহার করতে হবে। প্রথমে শরীরের ডান পাশ এবং পরে শরীরের বাম পাশ ধৌত করতে হবে। ৩ বার বা ৫ বার করে ধুলেই হবে। প্রথম বার পানি দেয়ার পর শরীরের উপরিভাগ পরিষ্কার করতে ফোমের স্পঞ্জ ব্যাবহার করা যাবে। দুই জন কাত করে ধরে শরীরের নীচের অংশ পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। কিন্তুু পানি ঢালার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করা বাধ্যতামুলক। শাওয়ার ব্যাবহার করা যাবে না। পানির যেন ছিটা না ওঠে।
৮. এবার সুগন্ধি যুক্ত পানি ব্যাবহার করে উপরের প্রক্রিয়া অনুসরন করে সমস্ত শরীর আবার ও ধৌত করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন শরীরের সব জায়গায় যেন পানি পৌছে।
৯. এবার শরীরের উপর রাখা ভিজা টাওয়ালটি পরিবর্তন করতে হবে। এবং শুকনো টাওয়াল দিয়ে সারা শরীর ভালভাবে মুঝে শুকিয়ে ফেলতে হবে। শরীরের নীচভাগে টেবিলের উপরে থাকা পানি ও মুছে ফেলতে হবে।
১০. এবার মৃতদেহের বিভিন্ন অংশে আতর লাগানো যেতে পারে। যেমন- হাতের কবজি, পায়ের পাতা, কপাল, মাথা, কান ও গলা ইত্যাদি স্থানে আতর লাগানো যেতে পারে।
১১. এই টেবিলের উপর রেখেই কাফনের কাপড় পরিয়ে নিতে হবে। কাফনের কাপড় পড়ানোর আগে সবাইকে আবার ও হ্যান্ড জেল ব্যাবহার করা আবশ্যক।
১২. কাফন পরানোর পর পর ই লাশের কাফনের কাপড়ের নীচে একটি পলিথিনের শীট বিছিয়ে দিতে হবে। লাশের পায়ুপথ দিয়ে যদি কোন তরল বা ময়লা নি:সৃত হয় তা যেন কাফনের কাপড় ভেদ করে কারো শরীরের না লাগে। গবেষনায় দেখা গেছে, করোনায় মৃত ব্যাক্তির মলে ভাইরাসের উপস্থিতি সাম্প্রতিক গবেষনায় প্রমানিত হয়েছে।
১৩. কফিনে লাশ স্থানান্তর করার সময় স্বেচ্ছাসেবীদের খেয়াল রাখতে হবে যে তারা পলিথিনের শীটের নিচে তাদের হাত রেখে লাশ উঠিয়েছেন। এবার কফিন বক্সে লাশ রেখে ঢাকনা বন্ধ করে দিতে হবে।
১৪. এবার লাশ ধোয়ানোর জায়গা ভালভাবে ব্লিচ দিয়ে পরিষ্কার করার পর জীবানুনাশক স্প্রে ছিটিয়ে দিতে হবে। সব ময়লা আবর্জনা নিরাপদ জায়গায় ফেলতে হবে।
১৫. এবার হাতে জেল লাগিয়ে নিন এবং যার যার ব্যাক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম বা পিপিই অপসারন করুন। আগে থেকে পিপিই গুলি ফেলার জন্য বিন রেডী রাখতে হবে। পিপিই খোলার সঠিক পদ্ধতি (ডফিং) অনুসরন করতে হবে। ধারাবাহিক ভাবে এগুলি খুলতে হবে (খোলার ধারাবাহিকতা: গ্লোভস > আই কাভার > এপ্রন > মাস্ক > হাত ধোয়া)
১৬. এবার উপরোক্ত ৪ জন স্বেচ্ছাসেবী আবারও ফ্রেশ মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লোভস পরিধান করবেন। প্রথমেই কফিনের বক্সটির চারপাশ জীবানুনাশক স্প্রে দিয়ে মুছে ফেলবেন এবং স্বেচ্ছাসেবীরা তাদের সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখবেন।
জানাযা সম্পাদনের প্রক্রিয়া
স্কটল্যান্ড এবং ইউকে সর্বোচ্চ ১০ জন এলাউড। শুধু মাত্র পরিবারের সদস্য কিংবা ঘনিষ্ট বন্ধু বান্ধবরা উপস্থিত হতে পারবেন। এ সময় দুই মিটার দুর দুর প্রত্যেককে দাড়াতে হবে। ইমাম যখন জানাযা শেষ করবেন তখন আগের সেই ৪ জন স্বেচ্ছাসেবী লাশ কবরে রেখে সরে আসবেন। কফিন বক্স সহ লাশ কবরে রাখা হবে। তখন আগতরা একজন একজন করে কবরে ৩ মুষ্টি মাটি দিয়ে আবার নিজের জায়গায় এসে দাড়াবেন। সবার মাটি দেয়া শেষ হয়ে গেলে স্থানীয় কবরস্থানের লোক জন এসে মাটি ভরাটের কাজটি সম্পন্ন করবে । মাটি ভরাট শেষ হয়ে গেলে ইমাম সাহেব সবাইকে নিয়ে দোয়া পড়বেন। আগতরা কিন্তুু যার যার নির্দিষ্ট জায়গায় দাড়িয়ে দোয়ায় শরিক হবেন। এরপর একজন একজন করে ২ মিটার দুরত্ব বজায় রেখে যারা গন্তব্যে ফিরবেন।
পরিবারের সদস্যরা কি লাশ দেখতে পারবেন ?
কফিনে ঢোকানের পর আর কখনই লাশটি দেখা যাবে না। যদি কোন পরিবারের সদস্য লাশ দেখতে চান তাহলে গোছলের পর যখন লাশ কফিন বক্সে রাখা হবে শুধুমাত্র তখন দেখতে পারেন। তবে শর্ত হচ্ছে তারা কেউ লাশ স্পর্শ করতে পারবেন না। অন্তত দুই ফুট দুর থেকে লাশের চেহারা দেখবেন। তারা অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করবেন। একসাথে শুধু একজন আসবেন। এক জন থেকে আরেক জন ২ মিটার দুরত্বে অবস্থান করবেন। যদি উপরোক্ত নিরাপত্তামুলক পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব না হয় তাহলে লাশ কাউকে দেখানো যাবে না।
দাফন শেষে স্বেচ্ছাসেবীরা সংক্রমন এড়াতে কি পদক্ষেপ গ্রহন করবেন ?
মৃতের জানাযা ও গোছল শেষে স্বেচ্ছাসেবীরা যখন বাড়ীতে ফিরবেন তখন তাদেরকে কিছু নিরাপত্তামুলক ব্যাবস্থা নিতে হবে। জানাযা শেষে সরাসরি বাসায় চলে আসতে হবে। ঘরে ঢুকার আগে একটি ব্যাগে মোবাইল, চাবি, ঘড়ি ইত্যাদি রাখবেন। দরজার বাইরে পরনের জুতাটি খুলে একটি পলিথিন ব্যাগে পুরে রাখবেন। শরীরের ব্যাবহৃত সবগুলো কাপড় চোপড় খুলে আরেকটি পলিথিন ব্যাগে রাখবেন। জেল দিয়ে হাত পরিষ্কার করবেন। জুতার ব্যাগ বাইরে রেখে অন্যান্য ব্যাগ গুলি নিয়ে সরাসরি বাথরুমে ঢুকবেন। এই জুতাটি কমপক্ষে ৫ দিন পর ব্যাবহার করা যাবে। ঘরে ঢুকার এসময় কোন দরজার হ্যান্ডেলে টাচ করতে পারবেন না। কাউকে বলে আগে থেকে সব দরজা খুলে রাখার ব্যাবস্থা করতে হবে। বাথরুমে ঢুকে সমস্ত পরিধেয় কাপড় ও মোজা ব্যাগে ঢুকিয়ে ব্যাগটি নিরাপদ স্থানে রেখে দিতে হবে। এবার হাত ধুয়ে নিন। ৫-৬ দিন পর এগুলি আলাদা করে মেশিনে ওয়াশ করতে হবে। এরপর ব্যাবহারী জিনিষ গুলি (চাবি, মোবাইল ইত্যাদি) এন্টিসেপটিক ওয়াইপ দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। বাথরুমের ফ্লোর ও ট্যাপ জীবানুনাশক ওয়াইপ/সাবান দিয়ে মুঝে ফেলতে হবে এবং নিজের হাত ধুতে হবে। এরপর নিজে ভালভাবে শাওয়ার নিতে হবে। এ পদ্ধতি অবলম্বন করলে নিজের পরিবারের কাউকে সংক্রমন করার সম্ভাবনা থাকবে না।
মোটকথা হচ্ছে, সঠিক পদ্ধতি ও নিরাপত্তা মুলক পন্থা অবলম্বন করে মসজিদ কিংবা কমিউনিটির উদ্যোগে যথাযথ নিয়মে করোনায় মৃত লাশের সৎকার করা যেতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত প্রয়াস ও প্রস্তুতি গ্রহন। ফিউন্যারেল সার্ভিস, মসজিদ কতৃপক্ষ এবং কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যাক্তিগন যৌথভাবে উদ্যোগ গ্রহন করলে এ জটিলতার আশু সমাধান হতে পারে।
এ ব্যাপারে কোন আরও কোন তথ্য বা পরামর্শের (বিনামূল্যে) জন্য লেখকের সাথে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে । E-mail: nirapod@outlook.com, Tel: 07930 183352
প্রয়োজনীয় তথ্যের লিংক :
– ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গেনাইজেশন এর গাইডলাইন: Infection
Prevention and Control for the safe management of a dead body in the context of
COVID-19 (WHO , 24 March 2020) ক্লিক করুন
– পিপিই (পারসোনেল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট) ট্রেনিং ভিডিও: ক্লিক করুন
– মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন: কভিড বারিয়্যাল সংক্রান্ত গাইড লাইন : ক্লিক
করুন
– পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড কতৃক প্রকাশিত কোভিড ডেডবডি সংক্রান্ত নীতিমালা: Risk of transmission of COVID-19 from an infected body: এখানে ক্লিক করুন
– ইউকে হেলথ এন্ড সেইফটি এক্সিকিউটিভ (Managing infection risks when handling the deceased): এখানে ক্লিক করুন
– পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড : Guidance for care of the deceased with suspected or confirmed coronavirus (COVID-19) : এখানে ক্লিক করুন
– Standard Infection Control Precautions (SICPs) : এখানে ক্লিক করুন
– Transmission Based Precautions (TBPs) : এখানে ক্লিক করুন