বিশ্ব অর্থনীতিতে আবারো অস্বস্তি, আতঙ্কে বিনিয়োগকারীরা। বড় অর্থনীতির দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির নিম্নগতি, ক্রমহ্রাসমান জ্বালানি তেলের দামে বাড়ছে শংকাও। প্রভাবে বিশ্ব পুঁজিবাজারেও ধস নামছে। জ্বালানি তেলের দাম আরো কমে যাওয়ার পূর্বাভাসও রয়েছে। তথাপি উত্পাদনও বাড়াচ্ছে তেল উত্তোলনকারী দেশগুলো। এ অবস্থায় বাংলাদেশের মত আমদানিকারক দেশ কিছুটা লাভবান হলেও বিশ্ব যদি মন্দাবস্থায় পড়ে যায়, তবে বড় ধরনের ঝুঁকির মোকাবেলাও করতে হতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম এখন সর্বনিম্নে। গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অপরিশোধিত তেল বিক্রি হয়েছে প্রতি ব্যারেল ৪০ ডলারে। আগামী বছর নাগাদ তেলের দাম আরো ১০ ডলার কমতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এর ফলে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ লাভবান হয়েছে। বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকার ভর্তুকির চাপ থেকে রক্ষা পেয়েছে দেশটির অর্থনীতি। যদিও অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম সমন্বয় করা হয়নি, তথাপি ভর্তুকির অর্থ অন্য খাতে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
আমদানি নির্ভর দেশ হওয়ার ফলে তেলের মূল্য কমায় বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় কমেছে যা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতেও বড় ভূমিকা রাখছে। এই রিজার্ভ এখন বিনিয়োগযোগ্য করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণের সুযোগও সৃষ্টি করেছে।
যে কয়টি কারণে জ্বালানির দাম কমছে তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তেলের মজুদ বেড়ে যাওয়া, আন্তর্জাতিক সরবরাহ বাড়ার শঙ্কা এবং এশিয়া বিশেষত চীন ও জাপানের অর্থনীতির গতি মন্থর হওয়া উল্লেখযোগ্য। চীনের মুদ্রার দরপতনে সব ধরনের পণ্য বাজারেই প্রভাব পড়েছে।
এদিকে, ইরানের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রভাবে তেলের বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধি এবং দরপতন অব্যাহত থাকবে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সীমিত রাখার বিনিময়ে সেদেশের উপর থেকে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার প্রভাবেই এমনটি হবে। আমদানিকারক দেশগুলো এর সুফল পাবে। তদুপরি, বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্ অর্থনীতির দেশ জাপানেও প্রবৃদ্ধি কমছে। এ অবস্থায় বিশ্ব অর্থনীতি আগামী দিনগুলোতে কঠিন সময়ের মুখোমুখি হবে। তার ইঙ্গিত এখনি স্পষ্ট হচ্ছে। বাড়ছে আতঙ্কও।
জ্বালানি তেল কোম্পানিগুলো আগামীতে দর কমার শংকা করায় শেয়ার বাজারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। গতকাল বিভিন্ন স্টক এক্সচেঞ্জে সূচকের পতন ঘটেছে। নাসডাক, ডাউজোন্স, এসএন্ডপি ৫০০ সূচক কমেছে। উল্লেখযোগ্য হারে দর কমেছে তেল কোম্পানিগুলোর শেয়ারের। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক সুদের হার বৃদ্ধির উদ্যোগ নিলেও তার কোন প্রভাব শেয়ার বাজারে পড়েনি। বরং নীতিনির্ধারকরাও শংকায় আছেন এতে যদি মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। কিংবা বিশ্ববাজারে এর প্রভাব কি হবে তা নিয়েও ভাবা হচ্ছে।